কেন জ্বলে জোনাকিরা?
প্রতিক্ষণ ডেস্ক
‘জোনাকির আলো নেভে আর জ্বলে,শাল মহুয়ার বনে’। ছোটবেলায় গ্রামের বাড়িতে এরকম কোনো বনে গিয়ে জোনাকি পোকা ধরেছেন অনেকেই। আর এই জোনাকিকে মিটমিট করে জ্বলতে দেখে মনের গহীনে কতশত প্রশ্নই না উঁকি দিয়েছে। কী করে জ্বলে? কেন জ্বলে? এরকম হাজারো প্রশ্ন।
চলুন জেনে নিই, এর গোপন রহস্য কাহিনী:
জোনাকিরা কিন্তু অবিরাম আলো জ্বালায় না। কখনও আলো জ্বলে আবার কখনও নিভে। কিন্তু কেন ওরা আলো জ্বালে সেটাই রহস্য!
যখন আলো জ্বলে তখন সেই আলো থেকে তাপও উৎপন্ন হয়। তাহলে, জোনাকি কীভাবে এই তাপ সহ্য করে? আলো জ্বালাতে গিয়ে জোনাকি পুড়ে যায় না কেন? আসলে জোনাকির আলো একেবারে ঠাণ্ডা। তাই নিজের আলোয় জোনাকি পুড়ে যায় না।
জোনাকির শরীরের পেছনের দিকে আলো তৈরির উৎস আছে। এর ভেতরে থাকে দুই ধরনের রাসায়নিক পদার্থ। লুসিফেরাস ও লুসিফেরিন।
লুসিফেরাস জোনাকি পোকার খাদ্য শক্তিকে কাজে লাগিয়ে আলো ও তাপশক্তি উৎপন্ন করে। অন্যদিকে, লুসিফেরিন উৎপন্ন তাপকে ঠাণ্ডা করে সেগুলোকে আলোতে পরিণত করে। উৎপন্ন আলোর বিচ্ছুরণ ঘটানোর কাজটাও করে লুসিফেরিন।
জোনাকি পোকা রাতের অন্ধকারে পথ দেখার জন্য আলো জ্বালে না। জোনাকির আলো হচ্ছে তার ভাষা। মানুষ যেমন নিজের মনের কথা আরেক জনকে বোঝানোর জন্য কথা বলে; জোনাকিও ঠিক সেই কাজটিই করে।
বেশিরভাগ কীট-পতঙ্গই মুখ দিয়ে শব্দ করতে পারে না। কেউ ডানা ঝাপটে, কেউ পা দিয়ে শব্দ করে ভাবের আদান-প্রদান করে। জোনাকি কিন্তু সেটাও করতে পারে না।
তাই ভাব বিনিময়ের জন্য জোনাকির একমাত্র মাধ্যম হলো তার এই আলো। এভাবে আলো জ্বালিয়ে নিভিয়ে অন্যদের কাছে তারা সঙ্কেত পাঠিয়ে ভাব বিনিময় করে। পুরুষ জোনাকিগুলো উড়তে উড়তে আলো জ্বালে। সঙ্কেত পাঠায় স্ত্রী জোনাকির উদ্দেশ্যে। স্ত্রী জোনাকিরা তখন ঝোপের আগায় কিংবা ঘাসের ওপর বসে থাকে। পুরুষ জোনাকির সঙ্কেত এসে ধরা পড়ে তাদের মস্তিষ্কে। স্ত্রী জোনাকিরা তখন আলো জ্বালিয়ে পুরুষ জোনাকির সঙ্কেতের জবাব দেয়।
প্রতিক্ষণ/এডি/এফটি